২০২৪ সালে বাংলাদেশের কত শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার
অপুষ্টি বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৩৬ শতাংশ শিশু এখনও অপুষ্টির শিকার।
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপুষ্টি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাংলাদেশের সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অপুষ্টি দূর করতে একসঙ্গে কাজ করছে, তবে এখনও অনেক কাজ বাকি।
অপুষ্টির কারণ:
১. দারিদ্র্য: বাংলাদেশের একটি বড় অংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, যেখানে শিশুরা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পায় না।
২. খাদ্য নিরাপত্তার অভাব: অনেক পরিবার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করতে পারে না, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
৩. স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব: গ্রামের অনেক মানুষ এখনও সঠিক পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞ, যার ফলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়।
৪. মাতৃস্বাস্থ্য: গর্ভাবস্থায় মায়েদের অপুষ্টি শিশুর অপুষ্টির প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি।
অপুষ্টির প্রভাব:
- শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস: অপুষ্ট শিশুদের উচ্চতা এবং ওজন সাধারণত তাদের বয়সের তুলনায় কম থাকে।
- মানসিক বিকাশের ঘাটতি: অপুষ্টির কারণে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা এবং শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: অপুষ্টির কারণে শিশুরা নানা ধরনের রোগের ঝুঁকিতে থাকে।
সমাধান ও করণীয়:
১. খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বৃদ্ধি:
সরকার ও বিভিন্ন এনজিওদের সহযোগিতায় শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। স্কুল পর্যায়ে মিড ডে মিল কর্মসূচি চালু করে শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।
২. স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি:
গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা পুষ্টিকর খাদ্যের গুরুত্ব বুঝতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে মায়েদের পুষ্টির গুরুত্ব জানানো যেতে পারে।
৩. মাতৃ ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ:
গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গর্ভের শিশুরা সঠিক পুষ্টি পায়।
৪. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ:
জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্যের প্রাপ্যতা বাড়িয়ে শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
উপসংহার:
২০২৪ সালে বাংলাদেশের শিশুদের প্রায় ৩৬ শতাংশ অপুষ্টির শিকার, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগের বিষয়। অপুষ্টি থেকে শিশুদের মুক্ত করতে হলে সুষম খাদ্য, স্বাস্থ্য সচেতনতা, এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেকেরই এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। একমাত্র সম্মিলিত উদ্যোগই পারে শিশুদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।